শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক।। বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন লেঙ্গুটিয়ার চরপশ্চিম গ্রামের আনিস গাজী(আনিস মিস্ত্রী)তার জামাতা রিয়াজ মোল্লার কাছে পাওনা ৫হাজার টাকা শ্রীপুর গ্রামের আজিজুল হক কুট্টি শেখের ছেলে মঞ্জু শেখকে দিয়েছে।লেঙ্গুটিয়ার বাজার থেকে ঘুরে গিয়ে জাল টাকার নোট বলে ফেরত দিতে গিয়ে জাল টাকা রহস্য উদঘটিত হয়েছে।
সরোজমিনে ঘুরে বাসিন্দা-পুলিশ,জনপ্রতিনিধির তথ্যমতে জানাগেছে,শ্রীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রিয়াজ মোল্লার বাড়িতে আজিজুল হক কুট্টি শেখের ৪ ছেলে নদীর কবলগ্রাসে বাড়ি-ঘর হারিয়ে ওকরাইত হিসেবে বসবাস করেছে।কুট্টি শেখের ৫ ছেলের মধ্যে সেজ মঞ্জু শেখ।রফিক,মনির,নুরনবী,রুবেল জেলে ও দিনমজুরী কাজ করে।মঞ্জু শেখ ২০১২ সাল পর্যন্ত কারেন্ট জাল বাইতেন।
এরপরে রিয়াজ মোল্লার সাথে ট্রলারে ভাগ দিয়েছে।রিয়াজ মোল্লা ট্রলারে কামাই-রোজগার না পাওয়ায় সুদ হিসেবে টাকা দাবি পূর্বক জাল-ট্রলার হাতিয়ে নিয়েছিল।ওই সুদের টাকা বাড়তে বাড়তে লাখ লাখ টাকা ঋনগ্রস্হ হয়ে গ্রাম ছেড়ে রিয়াজ মোল্লা পালিয়ে ঢাকা গিয়ে আত্মগোপনে চাকরী করেন।প্রতিবছর ৪০/৫০ হাজার টাকা সুদাসল দিলেও মঞ্জু শেখের ঋন শোধ হচ্ছেনা।
গত বৃহস্পতিবার (৬জুন ২০১৯) বিকেল সাড়ে ৫টায় রিয়াজ মোল্লার শশুর আনিস গাজীর মেয়ে রুবিনা বেগমের গার্মেন্টসের বেতন বাবদ আনিত ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।অতঃপর মঞ্জু শেখের লেঙ্গুটিয়ার বাজারে চলে যায়।পরে গিয়ে জাল টাকার নাটক সাজিয়ে টাকা ফেরত দিতে চাইলে, মেহেন্দিগঞ্জ থানার পুলিশকে খবর দেয়া হলেই গোপনে শ্রীপুর পালিয়ে যান।
বাহেরচর গ্রামের আ.লীগের সভাপতি মোঃ দিদারুল ইসলাম মোল্লা সাংবাদিকদের জানায়,মঞ্জু শেখ আমার আপন মামাতো ভাই।নিজের পৈত্রিক কোন জমাজমি নেই।মমতাজ মৃধার চাচাতো ভাই ও নয়ন জোমাদ্দারের সহযোগী বিএনপির যুবদলের নেতা কবির মৃধা ও মঞ্জু শেখ গাগরিয়া চরের দেড়শতাধিক একর জমি জোরপূর্বক ভোগ দখলের মাধ্যমে বছরে অন্যের জমি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করছে।আমার দুই ভগ্নিপতি সত্তার বেপারী,মুশফিকুর রহমান নিউটনের ১০ একর জমি দখলমুক্ত করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
এমনকি!আদালতে ও থানায় মামলা দিয়ে মঞ্জুকে সরিয়েছি।সে কিসের বিনিময়ে ৮০/৯০ গরুর মালিক জানিনা!শুনেছি যে,২০১১ সালে দুলাল বেপারীর একটি গরু কিনেছে।পরের বছর ৮টি।তবে সে এখন লাখ লাখ টাকার মালিক।সাংসদ পংকজ নাথের চাচাতো ভাই রামকৃষ্ণ নাথ এবং শংকর বাবুর নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে শতো শতো একর জমি দখলে রেখেছে।একারনেই আলাদীনের চেরাগ পেয়েছে।
আনিস গাজী বলেছেন,আমি ভালো টাকা দিলাম।জাল নোট কার!আমার মেয়ে একজন গার্মেন্টসের শ্রমিক।তার জামাই রিয়াজ মোল্লা আগে সাগরে জাল বাইতেন।হতদরিদ্র জেলে পরিবার।সে এখন ঢাকায় রডের মিলে চাকরী করে।আমি পেশায় মিস্ত্রী।আমার মেয়ের বেতনের টাকা তাঁকে দিয়েছি।
শ্রীপুর গ্রামের ইব্রাহিম ডাক্তারের ভাগ্নে মনির হোসেন সাংবাদিকদের জানায়,আমার ভগ্নিপতি ঢাকার ব্যাংকে চাকুরীরত আছে।আমার ভগ্নিপতি সাথে এটিএম বুথের নিরাপত্তার জন্য মঞ্জু শেখের ভাই’র ছেলে জুয়েল চাকরীর আবেদন করেছিল।সেই বুথের ট্রেনিং ও পোশাক,ল্যাপটপ ক্রয় বাবদ ৭০ হাজার টাকা আমার ভগ্নিপতি খরচ দেন।
আমার ভগ্নিপতি ২০১৭ সালের এপ্রিলে গ্রামে আসলে ওই পাওনা টাকা পরিশোধ করতে নুরনবী শেখ তার ভাই মঞ্জু শেখের কাছে ২টি গাভী বিক্রি করে।মঞ্জু শেখ তাকেও জাল টাকা ধরিয়ে দিয়েছে।সেই টাকা দিয়ে শ্রীপুর গ্রামের মেম্বার হাফেজ খাঁনের ফুফাতো ভাই কালাম শরীফের ষাঁড়(বলদ) গরু ক্রয় গিয়ে এক সাংবাদিককে টাকা দেখালে,জাল টাকা প্রমাণিত হয়।শ্রীপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আলতাফ এসে আমাকে আটক করেছিল।স্হানীয় গ্রামবাসী ও আ.লীগ নেতাদের অনুরোধে শ্রীপুর ক্যাম্পের পুলিশ-সাংবাদিকের মানবিক বিবেচনায় আমাকে সহ মঞ্জু শেখের সাথে সম্পৃক্তদের ক্ষমা পূর্বক ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
বিএনপির যুবদলের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ও মঞ্জু শেখের সহযোগী মোঃ কবির মৃধা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,আমি নগদ টাকায় বার্ষিক হারে জমি রাখি।পরে গোলপাতা-চাইর মহল দেই।কিছু জমিতে চাঁষাবাদ করি।মঞ্জু শেখ ২০০৬ সালের ৬ নভেম্বর থেকেই ভোলার যুগীরকোলের মাদক ও জাল টাকার ব্যবসায়ীর সাথে বন্ধুত্ব(দোষস্ত)গড়েছেন।সেই সুবাধে বরিশাল-ভোলা সহ মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর,আলিমাবাদ,চরগোপালপুর,জাঙ্গালিয়া,উলানিয়া,চাঁনপুর,পাতারহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে জাল টাকার ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রীপুর ইউনিয়নের আ.লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান হারুন মোল্লা মামাতো ভাই পরিচয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার পুলিশ-জেলার পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ পূর্বক রমরমা মাদক ও জাল টাকার ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন।আমার মাত্র ২ সন্তানের খরচ দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।প্রতিবছর ৩০/৪০ একর জমি নগদ টাকায় রেখে ৩/৫ লাখ ব্যবসা হলেও কোনো কিছুই করতে পারচ্ছিনা।মঞ্জু শেখের পরিবারের মাসিক খরচ প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা।সেই বিষয়ে সঠিক তদন্ত করলেই রহস্যের জট খুলে যাবে!
শ্রীপুর ইউনিয়নের মেম্বার মোঃ শাজাহান মৃধার সাথে আলাপকালে,সে বলেছেন-মঞ্জু শেখের বিরুদ্ধে ডজন তিনের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনায় বরিশাল জেলার পুলিশের এসপি,এএসপি তদন্ত করলেও আলো মুখ দেখেনি।আমি এলাকার মেম্বার হিসেবে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে ৮/১০টি অভিযোগের স্বাক্ষী দিয়েছি।ওরা শেখ বাহিনীরা মাদক-জাল টাকার ব্যবসা করেছে।এলাকার সাধারণ মানুষ জিম্মি।পুলিশ প্রশাসন শেখ বাহিনীরা বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্হা নিতে পারেনি।
শ্রীপুর ইউনিয়নের আ.লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার মোঃ মাহমুদ বেপারী বলেন-শেখ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যানের আত্মীয় পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নির্মূলের লক্ষ্যে শ্রীপুরে পুলিশ ক্যাম্প স্হাপন করা হয়েছে।
তবুও তারা সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজি,চুরি-ডাকাতি,মাদক ও জাল টাকার ব্যবসা,মারামারি,জোর পূর্বক সরকারী খাস জমি এবং অন্যের রেকর্ডিং জমি দখল করেছে।তাদের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপদস্হ কর্মকর্তা তত্ত্বাবাধয়নে পুলিশ সদর দপ্তর,জেলা পুলিশ তদন্ত করেছে।শ্রীপুর ইউনিয়নের মানুষের শান্তি-নিরাপত্তা রক্ষার্থে শেখ বাহিনীরা অপরাধ মুক্ত করতে পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।শ্রীপুর ইউনিয়নের আ.লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান মোঃ হারুন মোল্লার বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন(০১৭১২-৪০৪৩৭৪) নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেনি।
এব্যাপারে মেহেন্দিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আবিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানায়,তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা নেয়া হবে।এবিষয়ে বরিশাল পুলিশ সুপার(এসপি) মোঃ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানায়,শ্রীপুর ইউনিয়নের শেখ বাহিনীরা বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত চলছে।তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
Leave a Reply